• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ঈদযাত্রা

ঈদযাত্রা জৌলুস ফেরাতে ড্রেজিং ও মার্কার স্থাপন

  • ''
  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০২৪

তরিকুল ইসলাম সুমন:

দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের ঈদ যাত্রায় পদ্মা সেতু কল্যাণে নৌযাত্রায় কিছুটা ভাটা পড়লেও এবছর আগের তুলনায় কিছুটা যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই সড়কের ধকল লাঘবে সাওয়ার হচ্ছেন লঞ্চে। ঢাকা-বরিশাল, পটুয়াখালী-ভোলা নৌ-পথগুলোতে তথা-নৌযাত্রা নিরবচ্ছিন্ন করতে নৌরুটগুলো ড্রেজিং করে বসানো হয়েছে মার্কার। নৌবন্দর গুলোতেও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের ঈদযাত্রায় বিআইডব্লিউটিএর আয়োজন ও যাত্রী ব্যবস্থাপনার নানা নির্দেশনা দিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। পরিদর্শন করেছেন ঢাকা সদরঘাট নৌবন্দরও।

বিআইডব্লিউটিএ অতিরিক্ত পরিচালক মো. আরিফ উদ্দিন বলেন, এ বছর গত বছরের তুলনায় কিছু যাত্রী বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। যেকোনো সময়ে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হতে পারে। তবে আবহাওয়া অধিপ্তর এবিষয়ে এখনো কোনো সতর্কতা জারি করেনি। সেই হিসেবে, বলা যায় ঈদ যাত্রা ভালো হবে। তবে আগে যে নাব্যতার সমস্যা ছিল এ বছরে সেই সংকটও দূর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে সমস্ত ধরনের জাহাজকে নিষ্ঠার সাথে নির্দেশাবলি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছে।

ঈদে যাত্রী ব্যবস্থাপনাবিষয়ক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঈদের আগের পাঁচ দিন ও পরের পাঁচ দিন রাজধানীর সদরঘাটে যাত্রীবাহী নৌকায় সব ধরনের পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে। নির্দিষ্ট ভাড়ায় ঈদের ছুটিতে লঞ্চে মোটরসাইকেল পরিবহন করা যাবে। রাতে নৌপথে স্পিডবোট চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া ৩-১৭ এপ্রিল সব ধরনের বালু বহনকারী বাল্কহেড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে। এছাড়াও, ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানে জরুরি এবং পচনশীল পণ্য বহনকারী ব্যতীতÑ ঈদের তিন দিন আগে এবং তিন দিন ফেরিতে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা নদীবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সংস্থার যুগ্ম পরিচালক মো. আলমগীর করিব বলেন, কিছুটা যাত্রী বৃদ্ধি পেলেও আশানুরূপ হয়নি। তবে যাত্রী বেশি হলেও কোনো সমস্যা নেই আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে প্রায় ২২০টি লঞ্চের তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে ৯০টি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বর্তমানে এ সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০টি তে নেমে এসেছে। তবে ঈদ উপলক্ষে ২০০ থেকে ৩০০টি লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলার সম্ভাবনা রয়েছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, ঈদের যাত্রায় কালবৈশাখী ঝড় আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই যাত্রী পরিবহন করতে হবে। আমরা লঞ্চ মালিকদের যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছি। জাহাজে পর্যান্ত লাইফ জ্যাকেট এবং বয়া রাখতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঝড় হলে সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটিকে যেকোনো জায়গায় নোঙর করতে হবে। এছাড়া লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ বিষয়টি তদারকি করবে। আশা করি নৌপথে ঈদ যাত্রা ভালো হবে। তবে যাত্রী ও চালকদের সচেতনতার অভাবে প্রায়ই কিছু কিছু ক্ষেত্রে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে অনেক সময় যথাযথ নির্দেশনা দিয়েও দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। সুতরাং, সচেতনতা সৃষ্টিই একমাত্র উত্তম উপায়।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান বলেন, ঢাকা হতে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ পথগুলোর অবস্থা এখন ভালো রয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে কয়েকটি নৌ-পথে যাত্রী কমে যাওয়ায় লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ আছে। কিন্তু কার্গো নৌ-যান চলাচল করছে। ফলে নৌ-পথগুলোর নাব্যতার কোনো সমস্যা নেই। ঈদে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনেও কোনো সমস্যা হবে না। দক্ষিণাঞ্চলের যে সব নৌ রুটের নাব্য সংকট ছিল বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছিল আমরা সেগুলোর প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করে মার্কার বসানোর ব্যবস্থা করেছি। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-পথগুলোর মধ্যে ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-পটুয়াখালী, ঢাকা ভোলা, ঢাকা-বরগুনা নৌরুটে সমস্যা নেই। আসা করা যায়, ঈদ মৌসুমে নাব্যতায় কোনো সমস্যা হবে না।

তিনি আরো বলেন, এ ছাড়া নৌÑ পথের কোথাও কোনো চাহিদা থাকলে ও নৌ-পথ খননের চাহিদা আসলে তা সাথে সাথেই খননের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতি ছয় ঘণ্টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা উচিত। একই সঙ্গে নৌযানগুলোকে আবহাওয়া সংকেত মেনে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়ে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ঘুর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা নেই। তবে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় আওহাওয়া অধিদপ্তর বলেছেন, আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর কিংবা ভারত সাগরে কোনো নিম্নচাপ নেই। তবে বাংলাদেশে কিছুটা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। যাত্রী সংকট এ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। যাত্রীদের কম থাকায় সারা বছরই সদরঘাটে আগের মতো আর ভিড় থাকে না।

নদী বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাত্রীর অভাবে ১০টি নৌপথ সম্পূর্ণ ও ২৫টি নৌপথ আংশিকভাবে বন্ধ বা অন্যদিকে, প্রতি বছর ঈদুল ফিতরে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যায় প্রায় দেড় কোটি মানুষ। এর মধ্যে ৩৭ দশমিক ৫০ লাখ (২৫ শতাংশ) নৌ-পথে যাতায়াত করে। এর প্রায় শতভাগই উপকূলীয় জেলা বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের যাত্রী। গত জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর চাঁদপুর বাদে উপকূলীন জেলাগুলোর নৌ-পথে যাত্রীর হার প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। ফলে এই ঈদে লঞ্চে ৩০ লাখ মানুষ (মোট যাত্রীর ২০ শতাংশ) যাবেন এবং তাদের মধ্যে দ্রুত। ২৭ লাখ ঢাকা নদীবন্দর দিয়ে যাবেন এর ফলে প্রতিদিন সদরঘাট টার্মিনাল দিয়ে ৩ লাখ মানুষ যাতায়াত করবে এবং বাকি যাত্রীর নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করবে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads